স্টাফ রিপোর্টার:
রংপুরের পীরগাছায় হিজবুত তাওহীদের কর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি হিজবুত তাওহীদের ৩৯ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪’শ জনের বিরুদ্ধে পীরগাছা থানায় একটি মামলা করেন। এর পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি হিজবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ২৭ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬’শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হিজবুত তাওহীদের করা মামলা প্রত্যাহার ও সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার পারুল ইউনিয়নের দেউতি বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, হিজবুত তাওহীদ একটি বিতর্কিত সংগঠন, তারা নবী-রাসুল ও হাদিসকে অস্বীকার করে এবং ইসলাম ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে। এটি আওয়ামী মদদপুষ্ট একটি সংগঠন। তারা এই সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি করেন।
বক্তাগণ আরও অভিযোগ করেন, সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে হিজবুত তাওহীদের নেতাকর্মীরা নাহদাহ সিদাম এলাকার একটি বাড়িতে গোপন বৈঠক করার সময় এলাকাবাসী বাধা দিলে তারা এলাকাবাসীর উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করে। এতে বহু গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। ওই দিনের ঘটনায় এলাকাবাসী মামলা করলেও পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করছে না। অপরদিকে এলাকাবাসীর নামে হিজবুত তাওহীদ একটি মিথ্যা মামলা করেছে।
মানববন্ধন থেকে বক্তাগণ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হিজবুত তাওহীদের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করাসহ হিজবুত তাওহীদের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলে হুশিয়ারি করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার নাগদাহ সিদাম এলাকায় হিজবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুস শামীমের বাড়িতে একটি সভার আয়োজনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ বাঁধে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয় এবং প্রায় ১৫-২০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও বার্তায় হিজবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুস শামীম দাবি করেন, তিনি সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ায় তার বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের অংশ হিসেবে সোমবার সকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক মিটিং করছিলেন তারা। এ সময় তাদের উপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার সাথে স্থানীয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।
তবে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর বজলুর রশীদ তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করা জামায়াতের আদর্শের পরিপন্থী। এই ঘটনায় জামায়াতের কেউ জড়িত নয়। বরং আমাদের লোকজন প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন স্বচক্ষে দেখেছে গ্রামবাসীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুটি মামলাই পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে।