
বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি।
রংপুরের বদরগঞ্জে দোকান ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি নেতা লাভলু সরকার (৪৫) হত্যাকান্ড ঘটনায় আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল হয়েছে উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে (২৩ এপ্রিল) শতশত মানুষ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেন। বদরগঞ্জ পৌরশহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত¡র থেকে সড়কের উভয়পাশে মানুষের স্বঃতফুর্ত ওই মানববন্ধন সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা (সদ্য বহিস্কৃত) মোহাম্মদ আলী সরকার, হুমায়ুন কবির মানিক, আশরাফুল ইসলাম সংগ্রাম, সুমন সর্দার, বিএনপি নেতা আবুজার গাফ্ফারী মন্টু প্রমুখ। উপস্থিত নিহত ছিলেন, নিহত লাভলু স্ত্রী রাহেনা বেগম, মেয়ে লাবনী আক্তার, ছেলে মামলার বাদী রায়হান কবীর ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। গত ৫ এপ্রিল ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে একটি ঢেউটিন দোকানঘর ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনায় বিএনপি নেতা লাভলু সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয় উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক ও তার ছেলে তারনভির আহম্মেদ তমালকে। একাধিক হত্যাকাণ্ডের মুলহোতা অভিযুক্ত শহিদুল হক মানিককে দ্রুত গ্রেপ্তার ও তার চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণের দাবীতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওইদিন দুপুরে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার অপসারণ দাবি করে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিজানুর রহমানের দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, অভিযুক্ত মানিক চেয়ারম্যান তার ছেলে তমাল দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে লাভলু সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করলেও এখনও ঘাতকেরা গ্রেপ্তার হয়নি। অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে ধরে পুলিশ বলছে দোষিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের নিরব ভুমিকার জন্য মাস্টারমাইন্ড মানিক তার ছেলেসহ মুল ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় মানববন্ধন থেকে।
উল্লেখ্য গত ৫ এপ্রিল বদরগঞ্জ পৌরশহরে ব্যবসায়ীক বিরোধের জেরে আলহাজ্ব লাভলু সরকারকে (৪৫) দিনে দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উপজেলা কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক তার পুত্র তানভির আহম্মেদ তমাল, বদরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সারোয়ার জাহান মানিকসহ ১২জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এতে আরো ১৫০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামী করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার লাভলু সরকারের ছেলে রায়হান কবীর মামলা করেন। কিন্তু এখনও প্রকৃত দোষি ব্যক্তিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-সংলগ্ন একটি দোকানঘরকে ঘিরে। দীর্ঘদিন ধরে দোকান মালিক ইশতিয়াক বাবু ও ভাড়াটিয়া ঢেউটিন ব্যবসায়ী জাহিদুল হক জোয়ারদারের মধ্যে দোকানঘর ভাড়ার মেয়াদ সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল।
চুক্তি ২০২৮ সাল পর্যন্ত থাকলেও মালিক ইশতিয়াক বাবু আগে দোকান ছাড়তে বলেন। জাহিদুল হক এতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপরই ইশতিয়াক বাবু ঘটনাটি তার মামা সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারকে জানান। অন্যদিকে জাহিদুল হক আশ্রয় নেন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিকের কাছে। এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনার কয়েকদিন আগে শহিদুল হক মানিকের ছেলে তানভির আহমেদ তমাল তার ফেসবুক আইডি থেকে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসের পর বদরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তাল হয়ে ওঠে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় চরম উত্তেজনা। এক পর্যায়ে গত ৫ এপ্রিল শহিদুল হক মানিকপন্থীরা পৌরশহরের বাচ্চা মিয়ার গলির আলম মার্কেট এলাকায় বিএনপি কর্মী লাভলুসহ আরো পাঁচজনকে কুপিয়ে আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় লাভলু রংপুর মেডিকেলে নেওয়া হলে বিকেল সাড়ে ৫টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বিদ্যুৎ মজুমদার জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতকদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলমান। এরমধ্যে ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের ধরতে পলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।